পাবনা জেলার আবহাওয়া মাঝারী হতে চরম ভাবাপন্ন এবং বৃষ্টিপাতের পরিমানও তাই। তাপমাত্রার পার্থক্য লক্ষণীয়। ডিসেম্বর হতে জানুয়ারীতে ১০০ সেলসিয়াসের নীচে আবার এপ্রিল-মে মাসে ৪০০ সেলসিয়াসের উপরে থাকে। বায়ুর আর্দ্রতা বর্ষা মৌসুমে (মে-অক্টোবর) সর্বাধিক ৮০% হতে ৯০% এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ৬০% এ নেমে আসে।
এ অঞ্চল গাঙ্গেয় পলিবাহিত মাটি দ্বারা গঠিত। এখানকার মাটি ক্যালকেরিয়াস হতে মাঝারী ক্ষারীয় পর্যায়ভূক্ত। জমি গাঙ্গেয় প্লাবিত সমতল ভূমির অন্তর্গত। তবে থালার মত নিম্ন অঞ্চলের মাটি শক্ত কাঁদা কিংবা স্থানে স্থানে পিট মাটিও পাওয়া যায়। ভৌগলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে পাবনা জেলার কৃষি নদী দ্বারা প্রভাবান্বিত। পদ্মা ও যমুনা বেষ্টিত পাবনা জেলার ভিতর দিয়ে ইছামতি, বড়াল, গুমানী, গোহালা, খলিশাডাঙ্গা, বাদাই, চিকনাই ও রতনাই নদী প্রবাহিত। বছরের অধিকাংশ সময় এ সকল নদীর পানিতে আবাদযোগ্য বিস্তীর্ণ এলাকা নিমজ্জিত থাকতো। নিয়ন্ত্রিত চাষাবাদের পরিকল্পনার প্রেক্ষাপটে চালু পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প পাবনা জেলার কৃষিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। এক সময় যেখানে শুষ্ক মৌসুমে কিছু রবি শস্য আর বর্ষা মৌসুমে শুধু পাট এবং গভীর পানির বোনা আমন ধানের মত অনিশ্চিত আবাদের উপর নির্ভরশীল ছিল, সেখানে নিয়ন্ত্রিত সেচাবাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক সময়ের খাদ্য ঘাটতির পাবনা জেলা উদ্বৃত্ত খাদ্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।
খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে জোরদার কৃষি স¤প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে এ জেলা কৃষিতে ইতোমধ্যেই আশাপ্রদ ভূমিকা রেখে চলেছে। খাদ্য উৎপাদনের সাথে সাথে জেলার বিশাল জনগোষ্টির পুষ্টি ঘাটতির দিক বিবেচনায় রেখে নানাবিধ পরিকল্পনা গৃহীত হচ্ছে। সেচ সুবিধার মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতের আবাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। একই সাথে কৃষি উপকরণের চাহিদাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব ও সবুজ সার তৈরী এবং আইপিএম/আইসিএম পদ্ধতি ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করে জৈব কৃষি প্রচার ও প্রসারের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রচলিত ফসল বিন্যাস ধীরে ধীরে তুলে নিয়ে সারা বছর জমি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সেচাবাদ উপযোগী উন্নত শস্য বিন্যাস চালু করা হয়েছে এবং চাষীরাও উন্নত শস্য বিন্যাসে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন।
কৃষি যন্ত্রপাতি, মানসম্পন্ন বীজ ও উন্নতজাত ব্যবহার, সেচ-সারসহ সকল উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাবনা জেলার বিগত চার বছরে শস্য নিবিড়তা ২২৫% থেকে ২৫০% এ উন্নীত হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে এ নিবিড়তা উন্নীতকরণের কার্যক্রম চলছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), কৃষি মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। ডিএই’র সদর দপ্তর, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকায় অবস্থিত যা সাধারনভাবে ’খামারবাড়ী’ নামে পরিচিত।
২০১৩ সালে রিভিজিট বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৪টি কৃষি অঞ্চল, ৬৪টি জেলা, ৪৮৭টি উপজেলা, ১৩৭১৩ টি ব্লক এবং ৩১৯টি পৌরসভা’র মাধ্যমে দেশজুড়ে কৃষি প্রযুক্তি বিস্তার ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে সম্প্রসারণ সেবা প্রদান করে আসছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস